Saturday , June 10 2023

অভিনেতা হওয়ার আগে ছিলেন শিক্ষক, মোশাররফ করিমকে নিয়ে ছাত্রের আবেগঘন স্মৃতিচারণ

নন্দিত অভিনেতা মোশাররফ করিম। তার দর্শকপ্রিয় নাটকের শেষ নেই। অভিনয় ক্যারিয়ারের শুরুটা থিয়েটারে। প্রায় তিন দশক আগে দেশের অন্যতম নাট্য সংগঠন ‘নাট্যকেন্দ্র’র সঙ্গে যুক্ত হয়ে মঞ্চনাটকের চর্চা শুরু করেন। টিভি নাটকের পাশাপাশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেও প্রশংসিত হয়েছেন।

শোবিজে আসার আগে শিক্ষক হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন মোশাররফ করিম। শিক্ষক দিবস (৬ অক্টোবর) উপলক্ষে তার এক ছাত্র তৌহিদুর রহমান উদয়ের একটি স্ট্যাটাসে সেই বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে।

উদয় লিখেছেন, ‘গতকাল শিক্ষক দিবস ছিল। বহুদিন ধরেই ভাবছিলাম একজনকে নিয়ে লিখব। যাকে নিয়ে লিখব তাকে সবাই চেনে। তবে সবার চেনা আর আমার চেনার মধ্যে বিশাল বড় একটা পার্থক্য আছে। সবাই তাকে চেনে বাংলাদেশের একজন সেরা অভিনেতা হিসেবে, আর আমি চিনি আমার একজন অসাধারণ শিক্ষক হিসেবে। তার নাম মোশাররফ করিম, আমাদের শামীম স্যার। স্যার একজন বড় মাপের সেলিব্রেটি। এখানে এমন কিছু বিষয় আমি প্রকাশ করব, যা স্যার কখনই মিডিয়ায় প্রকাশ করেননি বা করতে সংকোচ বোধ করেছেন। সুতরাং, আশা করব আপনারাও সেটা বিবেচনায় রাখবেন।

আমার বোন তখন এসএসসি পরীক্ষার্থী। কোচিং করছিল ই.হক মালিবাগ চৌধুরীপাড়া শাখায়। আমি সম্ভবত অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। আমার বাপ চাইলেন আমিও যেন কোচিং সেন্টারে গিয়ে টুকটাক ক্লাস করে আসি। ফলে শুরু হলো বোনের সঙ্গে আমার কোচিংয়ে যাওয়া-আসা। মোশাররফ করিম স্যার এসএসসি লেভেলের নিচে ক্লাস নিতেন না। ফলে কয়েক মাস কোচিংয়ে যাতায়াত থাকলেও এই মানুষটাকে দেখিনি কখনও।

কিন্তু তার সম্পর্কে প্রচুর গল্প শুনতাম বোনের কাছে। অভিনয় পাগল এই মানুষটা ক্লাসে নাকি নিজের স্বপ্নের কথা বলতেন খুব। একদিন বড় অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন তার চোখে-মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠতে দেখত ছাত্র-ছাত্রীরা। কিন্তু টেলিভিশনে সুযোগ হচ্ছে না। দুই একটা ছোট-খাটো চরিত্র পেলে সেটা নিয়ে ক্লাসে খুব আগ্রহ নিয়ে গল্প করতেন। শামীম স্যার ই.হকের সেই শাখার দুই পরিচালকের এক জন ছিলেন সম্ভবত।

কোচিং এর স্যাররা আবার ক্লাস এইটকে খুব একটা পাত্তা দিতেন না। প্রায়ই চুপচাপ বসে থেকে ক্লাস না করেই চলে আসতে হতো মাঝেমধ্যে। একদিন সকালে ক্লাস করতে গিয়ে প্রথম দেখলাম মানুষটাকে। কোচিং সেন্টার প্রায় ফাঁকা বলা চলে। আমরা চারজন স্টুডেন্ট বসে আছি। দেখলাম গাট্টা-গোট্টা খাটো করে খুব গম্ভীর এক লোক হাত দুটো পেছনে দিয়ে সারা কোচিংময় পায়চারী করে বেড়াচ্ছে। বুঝলাম সদ্য ঘুম থেকে উঠে এসেছেন। খুব গভীরভাবে কী যেন চিন্তা করছেন। ভাবলাম হয়তো কোন ডায়ালগ বা সিন নিয়ে চিন্তা করছেন। আমাদের বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, কোন ক্লাস? আমরা বললাম। স্যার বললেন, একটু অপেক্ষা করো, টিচার চলে আসবে কিছুক্ষণের মধ্যে। সেটাই স্যারের সঙ্গে আমার প্রথম কথোপকথন। প্রথম দেখাতেই মানুষটাকে আমার খুব ব্যক্তিত্বসম্পন্ন বলে মনে হইছে।

আরেক দিনের ঘটনা। ক্লাসে বসে আছি। এক স্যার এসে জিজ্ঞাসা করলো, আমরা ক্লাস এইট কি না। হ্যাঁ সূচক উত্তর দেয়ার পর তিনি আমাদের ব্যাগ ও বইপত্র নিয়ে তাকে অনুসরণ করতে বললেন। তাকে অনুসরণ করে বিরাট এক ক্লাসরুমে গিয়ে উপস্থিত হলাম। দেখি ক্লাসরুম ভর্তি স্টুডেন্ট। এই কোচিং-এ এক ক্লাসেই এত স্টুডেন্ট পড়ে আমার জানা ছিল না। এটা ছিল ক্লাস নাইন-এর ক্লাসরুম। বিশাল রুমের কোথাও জায়গা নেই। ক্লাসে বোর্ডের সামনে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং মোশাররফ করিম, সাধারণ একজন মানুষ। স্যার আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি শুম্মীর ভাই কি না। আমি বললাম, হ্যাঁ। এখন বেঞ্চের মাঝে কিছু জায়গা আছে, সেখানে গিয়ে বসতে হবে। সেটা করতে গেলে আবার অনেকগুলো ছাত্র-ছাত্রীকে ডিঙাতে হবে। স্যার দুষ্টুমি করে বললেন, তোমরা তো সবাই ছোট মানুষ। কোলে তুলে নিয়ে বসিয়ে দিই, কী বলো? সারা ক্লাসে হাসির রোল।

About Adminn

Check Also

বিয়ে বাড়িতে হাজির হয়ে প্রেমিকের চিৎকার, উঠে চলে গেল বরপক্ষ

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় প্রেমিকার বিয়েতে এসে প্রেমিকের চিৎকার-হট্টগোলে বিয়ের আসর থেকে উঠে চলে গেছে গেছে …