জোটকে ‘ঢাল’ করে নিজেদের ঘর সামলাতেই কি আব্বাস সিদ্দিকিকে ‘ভাল’ আসন ছেড়ে দিল সিপিএম? আব্বাসের দল ‘ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট’ (আইএসএফ)-এর প্রার্থিতালিকা ঘোষণার পর এমনই আলোচনা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। ঘটনাচক্রে, জোট আলোচনাতেও কংগ্রেস নয়, সিপিএমের সঙ্গেই বেশি ‘স্বচ্ছন্দ’ ছিল আইএসএফ। সেই কারণেই কংগ্রেসের সঙ্গে আসনরফা নিয়ে সমস্যার জেরে ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে আব্বাস সরাসরি নাম না করে তোপ দেগেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে। কিন্তু জোট নিয়ে বামেদের সঙ্গে আলোচনায় বার বার বিমান বসু ও মহম্মদ সেলিমের প্রতি আস্থা রেখেছিলেন আব্বাস ও তাঁর ভাই নওশাদ সিদ্দিকি।
আপাতত রাজ্যের ২১টি আসনে আব্বাসরা তাঁদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছেন। দেখা যাচ্ছে, গত চার দশক ধরে বামফ্রন্ট তথা সিপিএমের হাতে থাকা একাধিক আসন আব্বাসের দলকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তালিকা বলছে, রায়পুর, মহিষাদল, চন্দ্রকোণা, কুলপি, মন্দিরবাজার, জগৎবল্লভপুর, হরিপাল, খানাকুল, মেটিয়াবুরুজ, উলুবেড়িয়া, রানাঘাট উত্তর পূর্ব, কৃষ্ণগঞ্জ, সন্দেশখালি, চাপড়া, অশোকনগর, আমডাঙা, আসানসোল উত্তর, এন্টালি, ক্যানিং পূর্ব, জাঙ্গিপাড়া, মধ্যমগ্রাম, হাড়োয়া, ময়ূরেশ্বর, মগরাহাট পূর্ব আসনে প্রার্থী দেবেন আব্বাসরা।
বাংলার রাজনীতিতে এই সব আসনে ২০১১ সাল পর্যন্তও সিপিএমের বিধায়ক ছিলেন। এমনকি, বাম জমানায় ওই সব আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে সিপিএম বিধায়করা মন্ত্রীও হয়েছিলেন। ক্যানিং পূর্ব থেকে জিতে দীর্ঘদিন মন্ত্রী ছিলেন রেজ্জাক মোল্লা, মেটিয়াবুরুজ থেকে জিতে একসময় মন্ত্রী হয়েছিলেন মহম্মদ আমিন, আমডাঙা থেকে মন্ত্রী ছিলেন আব্দুস সাত্তার, এন্টালি থেকে জিতে স্পিকার হয়েছিলেন হাসিম আব্দুল হালিম। সূত্রের খবর, আব্বাসের সঙ্গে জোট আলোচনার শুরুতে সিপিএমের তরফে নিযুক্ত নেতা ওই আসনগুলি ছাড়তে রাজি হননি। কিন্তু তার পর তাঁর জায়গায় অন্য এক নেতাকে সমঝোতার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি ‘বাস্তব’ পরিস্থিতি বুঝে ওই আসনগুলি আব্বাসের জন্য ছেড়ে দেন। সিপিএমের একাংশ তাঁকে সমর্থনও করে। তাদের যুক্তি— এখন আসনগুলি ধরে রাখাই যুক্তিযুক্ত। জোটকে ‘ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করে সেটা করা গেলে আখেরে লাভ হবে। কিন্তু জবরদস্তি ওই সমস্ত আসনে প্রার্থী দিয়ে হেরে গেলে রাজনৈতিক দিক দিয়ে আরও ক্ষতি হবে। বলা হবে, জেতা আসনগুলিও সিপিএমের হাতছাড়া হয়ে গেল।