নন্দীগ্রামের বয়াল স্কুলের ৭ নম্ভবর বুথে দ্বিতীয় দফায় নন্দীগ্রামের নির্বাচন চলার সময় দু’ঘন্টা আটকে থাকতে হলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠলো নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা নিয়ে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং প্রশ্ন তুললেন, “বহিরাগতরা এসে বিভিন্ন জায়গায় ভোট লুঠ করছে বিজেপি। বয়াল ৭ নড়ম্বর বুথে ৮০% ছাপ্পা ভোট দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষদের ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী শুধু বিজেপিকে সহায়তা করে চলেছে।”
এখন প্রশ্ন উঠছে ১৪৪ ধারা জারি করে যে নন্দীগ্রামে নির্বাচন হচ্ছে, সেখানে একজন মুখ্যমন্ত্রী এবং নন্দীগ্রামের তৃণমূল প্রার্থীকে নিরাপত্তা দিতে কী প্রশাসন ব্যর্থ? না হলে কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দু’ঘন্টা স্কুলের বুথে আটকে থাকতে হবে। কেন ১৪৪ ধারা জারি করে নন্দীগ্রামে নির্বাচন হওয়ার পরও ৭ নম্বর বুথে তৃণমূলের নির্বাচনী এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হবে না? কেন মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তৃণমূল, বিজেপি মুখোমুখি সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরী হবে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপালকে বয়াল ৭ নম্বর বুথ থেকে ফোন করেন। এই প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। শেষে আইপিএস নগেন্দ্র ত্রিপাঠীর আশ্বাস পেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার হয়ে আসেন।
এই প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তো উঠবেই। আজ বয়াল ৭ নম্বর বুথে যা হলো সেটা পুরোপুরি রাজনৈতিক অভিসন্ধিমূলক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে নন্দীগ্রামের প্রার্থী। তিনি বয়াল ৭ নম্বর বুথে বুথে ছাপ্পা ভোট হচ্ছে জেনে সেখানে গিয়েছিলেন। সেই সময় বিজেপি কর্মীরা তাঁকে ঘিরে যে ভাবে জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিয়েছে সেটা রাজ্যের মানুষ দেখেছেন। এই দৃশ্যই প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে।”
এদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টানা দু’ঘন্টা বয়াল স্কুলের ৭ নম্বর বুথে বন্দি থেকে বার হয়ে বলেন, “বিজেপি-র দফারফা হবে। বয়াল সহ বেশ কিছু জায়গায় বিজেপি গুন্ডামি করেছে। এখানে যে বিজেপি প্রার্থী সে গত কাল রাত থেকে গুন্ডামি করছে। আবু তাহেরের বাড়ি গিয়ে তান্ডব করেছে। রবীন মান্নাকে মেরেছে।কেশপুরে আমার কর্মীকে খুন করেছে। আমি ৬৩টি অভিযোগ কমিশনে দিয়েছি। কমিশনের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, শান্তিতে ও নির্ভয়ে মানুষকে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। নির্বাচন গণতন্ত্রের উৎসব। সিআরপিএফ-কে আমি কিছু বলছি না। এর সবটাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ইন্ধনে হয়েছে। আপনারা নির্ভয়ে ভোট দিন। কোনও সমস্যা হলে আমায় ডাকবেন, আমি আবার আসবো। আমি নন্দীগ্রামে জিতবো। আমি মানুষের মুখ দেখেছি। ৮০% ছাপ্পা ভোট পড়েছে। আমি তাও ৯০% ভোট পাবো, জিতবো। আমি নন্দীগ্রাম নিয়ে চিন্তিত নোই। আমি চিন্তিত গণতন্ত্র নিয়ে।”
তবে নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করে বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী ভাবে বয়াল স্কুলের ৭ নম্বর বুথে দু’ঘন্টা রইলেন? ১৪৪ ধারার মাঝেই বয়াল ব্যাটেল, প্রশ্নের মুখে কমিশন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য এসব করছেন। হার নিশ্চিত বুঝে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই নাটক করছেন। নির্বাচন কমিশন কী ভাবে এটা হতে দিলো?”
এই প্রসঙ্গে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবীন দেব বলেন, “১৪৪ ধারা জারি থাকার সময় মুখ্যমন্ত্রী বা অন্য কেউ এভাবে নিয়ম ভঙ্গ করে, ভিড় করে বুথে যেতে পারেন না। এসবই হচ্ছে বিজেপি ও তৃণমূলের বোঝাপড়ার মধ্যদিয়ে। এভাবেই এই দুই দল মানুষের ভোটদানে বাধা সৃষ্টি করলো। নির্বাচন কনিশন কী করে এটা হতে দিলো? আমরা কমিশনের কাছে এই নিয়ে অভিযোগ জানাচ্ছি।”