বাংলায় বাবা লোকনাথের মহিমার প্রচার খুব একটা বেশি নয়। তথ্য বলছে আটের দশকের শেষদিক থেকে ক্রমশ গ্রাম-বাংলায় লোকনাথের পুজোর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। কিন্তু ইন্টারনেটই হোক আর পঞ্জিকা মতে এই মহাযোগীর জন্ম হয়েছিল আজ থেকে তিনশো বছর আগে। তাহলে কেন এত পরে লোকনাথের পুজো? ভক্তদের দাবি, লোকনাথই নাকি তাঁর ভক্তদের নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন প্রয়াণের একশো বছর পর তাঁর কথা সবার সামনে তুলে ধরতে।
আর তা আজও করে যাচ্ছেন তাঁর ভক্তরা। ইন্টারনেট বলছে, ১৭৩০ সালে সেপ্টেম্বরের জন্মাষ্টমীতে লোকনাথের জন্ম। যদিও অন্য কথা বলছে উইকি। জন্মস্থান উত্তর ২৪ পরগণার চাকলা কিংবা কচুয়া গ্রাম।
তাঁর বাবা রামনারায়ণ ঘষাল ছিলেন সৎ একজন ব্রাহ্মন মানুষ। মা কমলা দেবীও ছিলেন একজন ধর্ম পরায়ণ মানুষ। রামনারায়ণ চেয়েছিলেন তাঁর বড় ছেলে গৃহী জীবন ছেড়ে সন্নাস নিক। কিন্তু কমলা দেবী তিন পুত্র কাউকেই ছাড়তে পারেনি। কিন্তু লোকনাথকে বাঁধতে পারেননি মা কমলা দেবী। মাত্র ১১ বছর বয়সেই গুরুর সঙ্গে গৃহত্যাগ। কালীঘাট থেকে বেরিয়ে পড়েন দেশ-বিদেশে।
তথ্য বলছে বাবা লোকনাথকে শিব লোকনাথ বলা হয়। কিন্তু কেন এই প্রশ্ন অনেকের। তথ্য অনুযায়ী গুরু শ্রী ভগবান গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত ধরে সংসার থেকে বেরিয়ে যান। নানান ব্রত উদযাপন করে কঠোর তপস্যার জন্য চলে যান হিমালয়ে।
চারিদিকে শুধু বরফ আর বরফ। বিশাল এই বরফের গুহার মধ্যে গুরু ভগবান গঙ্গোপাধ্যায় সাধনায় বসেন। কিন্তু সেই গুহা ছেড়ে মুক্ত আকাশের নীচে বরফের আসনে ধ্যানে মগ্ন হন বাবা লোকনাথ। দিন, সপ্তাহ, মাস কোথা দিয়ে সময় চলে গিয়েছিল তা কেউ বুঝতে পারেনি। বরফের মধ্যেই ধ্যানমগ্ন লোকনাথের শরীর ঢেকে যেত। যা গুরুদেব বরফের গুহার মধ্যে থেকে দেখতেন। দিন গণনার হিসেব ছিল না। তবে লোকনাথ বাবা’র শরীরে জমা বরফ নব্বই বার গলে জল হয়ে গিয়েছিল বলে দাবি তাঁর অনুগামীদের।
আর এভাবেই গুরুদেব বুঝেছিলেন তাঁর নব্বইটি বছর পার করে দিয়েছেন। এর পরেই ঘটল সেই অবিস্বরনীয় সেই ঘটনা। পাহাড়ের গা বেয়ে ভোরের কাঁচা রোদ এসে পড়েছে বাবা লোকনাথের সিদ্ধাসনে। বরফের গুহার ভিতর থেকে গুরু ভগবান গঙ্গয়াপধ্যায় উঁকি দিয়ে দেখলেন সিদ্দ্বাসনে লোকনাথ বাবা নেই, সেখানে বসে আছেন দেবাদিদেব মহাদেব। গুরুদেব ভাবলেন “তাহলে কি ভুল দেখলাম?”
এরপরেই তিনি বরফের গুহা থেকে বের হয়ে দেখেন সিদ্ধাসনে বাবা লোকনাথই বসে আছেন। পর-মহুর্তে দেখেন সেখানে আবার লোকনাথ বাবা নেই, বসে আছেন দেবাদিদেব মহাদেব। গুরুদেব বুঝলেন, বাবা লোকনাথ আজ সিদ্ধিলাভ করেছেন। তিনি গুরু হয়েও প্রনাম করলেন শিবকল্প মহাযোগী বাবা লোকনাথ কে…..! আর এরপর থেকে লোকমুখে প্রচার হয় শিব লোকনাথের কথা।